• শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি: ফখরুল 

প্রকাশ:  ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৬:১৬
নিজস্ব প্রতিবেদক

পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে ৫৭ সেনা কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, আমরা মনে করি যে, এ ঘটনার যেভাবে তদন্ত হওয়ার দরকার ছিল, যেভাবে সুষ্ঠু তদন্তের মধ্য দিয়ে প্রকৃত অপরাধীদের এবং এর পেছনে যারা ছিলেন তাদের বের করে নিয়ে আসার যে তদন্ত প্রক্রিয়া হওয়া উচিত ছিল সেটা দুর্ভাগ্যজনকভাবে হয়নি। আমরা পত্র-পত্রিকায় দেখেছি যে, সেনা বাহিনী একটি তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছিল, সেটার পূর্ণাঙ্গ চেহারা দেশবাসী জানতে পারেননি।

শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে বনানী সেনা কবরস্থানে নিহতদের স্মৃতি স্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের কাছে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা বলেন।

‘পরবর্তীকালে যে বিচারের ব্যবস্থা হয়েছে, সে বিচারের ব্যবস্থায় আমরা দেখেছি- দুই বিষয়ে বিচার হয়েছে। একটি হলো বিদ্রোহ এবং হত্যা, আরেকটি হলো বিস্ফোরক। সাজা হয়েছে কিছু মানুষের, কিছু মানুষের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, কিছু মানুষকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। কিন্তু ৭ হাজারের মতো সৈনিক যারা অনেকে দাবি করেন যে, তারা সম্পূর্ণভাবে নির্দোষ তাদের কিন্তু এখন পর্যন্ত মামলার শুনানি শেষ করা হয়নি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, আমি কিছুদিন আগে কারাগারে ছিলাম। সেখানে দেখেছি যে, অনেক প্রাক্তন বিডিআরের সদস্য যাদের এ মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়েছে তারা ১৩-১৪ বছর ধরে সেখানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের পরিবার নষ্ট হয়ে গেছে, তাদের সমস্ত ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে গেছে।

‘আমরা এ দাবি করব, যে অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে, তা অতিদ্রুত সম্পাদন করে তাদের একটা ব্যবস্থা করা উচিত, তাদের মুক্তি দেওয়া উচিত। এ বিষয়গুলো দেখে এ মানুষগুলোকে তাদের পরিবার পরিজনের কাছে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার একটা সুযোগ সৃষ্টি করা হোক।’

নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা এ দিনে সেই সমস্ত চৌকস কর্মকর্তা যারা আমাদের সম্পদ ছিলেন দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার ক্ষেত্রে তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি এবং তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। পরম করুণাময় আল্লাহতালার কাছে এ দোয়া চাইছি তিনি যেন তাদের বেহেশত নসিব করেন। ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা ও তাদের পরিবার-পরিজন ছাড়া অন্যান্য যারা হত্যার শিকার হয়েছেন তাদের প্রতিও আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে, আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে এবং দলের অসংখ্য কোটি নেতাকর্মীদর পক্ষ থেকে গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, এ দিনটি দুঃখজনক ও কলঙ্কের দিন। এ দিনে আমাদের তখনকার বিডিআর যাকে আমরা সীমান্ত রক্ষা বাহিনী সে বাহিনীর ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে অত্যন্ত নৃশংসভাবে তাদের পরিবার পরিজনসহ হত্যা করা হয় এবং একটা ভয়াবহ নৃশংস ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করা হয়।

‘এটা (পিলখানার হত্যাকাণ্ড) একটা চক্রান্ত ছিল দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বে বিরুদ্ধে, আমাদের গর্বিত সেনাবাহিনীর মনোবলকে ভেঙে ফেলার জন্য।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ২৫ ফেব্রুয়ারি অত্যন্ত ভয়াবহ চক্রান্ত, একটা ষড়যন্ত্র এ দেশের বিরুদ্ধে এ জাতির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ ঘটনার মধ্য দিয়ে আমাদের যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা, আমাদের যে সার্বভৌমত্ব, আমাদের যে স্বাধীনতা তা প্রচণ্ডভাবে সেদিন আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল। আমাদের যে মহান মুক্তিযুদ্ধ সে মুক্তিযুদ্ধেও এতজন সেনা কর্মকর্তাদের হারাইনি। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে যে প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে, তার উদ্দেশ্য ছিল মূলত আমাদের সেনা বাহিনীর মনোবল ভেঙে দেওয়া।

২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার দিন সকাল থেকে বেগম খালেদা জিয়ার গতিবিধি সন্দেহজনক ছিল- আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের- এ বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা হচ্ছে সম্পূর্ণভাবে দায়িত্বহীন একটা কমেন্ট। এত বড় একটা ঘটনা যে ঘটনায় আজকে সমস্ত জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে ঘটনাগুলো কোনো একজন ব্যক্তি যার সম্পর্কে বলা হচ্ছে তিনি (খালেদা জিয়া) এ দেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তিনি এদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, বাংলাদেশের সেনা প্রধান, স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের স্ত্রী ছিলেন। তিনি এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সারাটা জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি এখনো অন্তরীণ হয়ে আছেন। এসব কমেন্ট একেবারেই ডাইভারসন করা। তাদের সমস্যাটা হচ্ছে, তারা মূল সমস্যায় না গিয়ে সব সময় অন্য দিকে যেতে চান। কারণ এ ঘটনাগুলো তারা সেভাবে সমাধান করতে পারেননি।

তিনি বলেন, আমরা মনে করি, সমস্ত সংকটের মূলে রয়েছে এখানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে পুনরুদ্ধার করা, একটি সত্যিকার অর্থে সুষ্ঠু অবাধ, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করা এবং সে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা সংকটগুলোর সমাধান করতে পারবো।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর,বিএনপি,তদন্ত,পিলখানা,হত্যাকাণ্ড
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close